এই মানুষটাই নিজের সন্তান ও সন্তানসমদের ভাল থাকার জন্য ভারতীয় সংবিধানের ৩৭৭ ধারা রদ করার জন্য সবকিছুকে অতিক্রম করে ভারতীয় সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ে লিখিত আবেদন করতেও পিছপা হননি। কেউ কিছু বললে বলতেন, সমাজ আবার কী? সমাজ তো আমি আর তুমি, সমকামী বিষমকামী বুঝি না, গর্ভে থাকা সন্তান ছেলে না মেয়ে নাকি অন্য কিছু জানার দরকার নেই, সুস্থ সন্তানের জন্ম দিতেই মায়েরা চায়। আর তাই সন্তানের পাশে দাঁড়ানোয় এতটুকু পিছপা হননি যে মানুষটা, তিনি আমার গর্ভধারিণী ভেবে আজ নিজের পিঠটা নিজেই চাপড়াই। ... ...
যেখানে সমকামী নিজেই মনে করছেন, তিনি সমকামিতা নিয়ে সুখী নন আর সেই থেকে আসছে অবসাদ, তার আসলি কালপ্রিট নাকি আমাদের সমাজ, যা সকলকেই ভাবতে শেখায় সমকামিতা অসুখ। কারণ, সুস্থ, স্বাভাবিক, সুন্দর, এই তিন স এর সাথে আমাদের সমাজে সমকামিতা যায় না। কারণ, এই সমাজে সমকামিতার গ্রহণযোগ্যতা নেই, স্বীকার করলে পদে পদে হাস্যাস্পদ হতে হয়, লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। একজন সমকামী তাঁর সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন নিয়ে অস্বস্তিতে ভুগবেন, এই সমাজে সম্মানের সাথে বাঁচার জন্য পরিবর্তন চাইবেন, মনে করবেন এটা একটি অস্বাভাবিক ব্যাপার, অর্থাৎ তিনি মনে করবেন, তিনি অসুস্থ, এবং নিজের ‘অসুখ’ নিয়ে তিনি অসুখী থাকবেন, তাতে আর আশ্চর্যের কী ! তাই এই ইগো ডিস্টনিক সমকামিতা মানেই অসুখ, তা আদৌ না। চিকিৎসকের নাকি সবার আগে এটি জানিয়ে, বুঝিয়ে কনভিন্স করিয়ে দেওয়া দরকার,সমকামিতার মধ্যে ভুল কিছু নেই। এবং সেই সাথে সবার।যারা অসুখ মনে করছেন, উলটে নাকি তাঁদেরই কাউন্সেলিং দরকার ! ... ...
মায়ের যদিও আমার সাজগোজ সম্পর্কে কোন দিন কোনো সমস্যা ছিল না। ছোটবেলায় যখন অতিরিক্ত মেয়েলি ছিলাম তখন ও আমার মা কোনদিনও আমার মেয়েলি স্বভাব নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেনি। আজ হয়তো সেই মেয়েলি স্বভাব গুলো জীবনে আর নেই কিন্তু আমি নিজে যে প্রচন্ডভাবে কুইয়ার সেটা নিয়ে কোন দ্বিমত নেই । তা সত্ত্বেও আমার মায়ের থেকে টিপিক্যাল রাশভারী পুরুষ চরিত্র না হওয়ার জন্য কোন দিন কথা শুনতে হয় নি। ... ...
- আচ্ছা, তুমি কি কোনো কঠিন রোগের জন্য স্টেরয়েড নিয়েছ ছোট থেকে? কারণ আমার কাছে একটি মেয়ে এসেছিল তার বাবা মার সাথে, তার boyfriend ছিল, কিন্তু তার ওষুধে সমস্যা হয়েছিল, তারপর লেসবিয়ান ছিল কিছুদিন। তারপর আমার ওষুধে ঠিক হয়ে একটা ছেলের সাথে সংসার করছে। তাই আমি তোমার মেজোমামাকে বলেছিলাম, তোমার সাথে একটু কথা বলব। ... ...
আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, এই অসহিষ্ণুতার পেছনে এক পৌরুষ-সাধনার চালচিত্র রয়েছে। মানিয়ে নেওয়া, নরমভাবে সমাধানের পথ খোঁজা, ক্ষেত্র বিশেষে মেনে নেওয়া এইসব মিনমিনে ভাব আমরা সজ্ঞানে বর্জন করেছি। আমাদের সমাজজীবনে আমরা একটা সহজ সমীকরণ করে নিয়েছি, নমনীয়তা ইক্যুয়াল টু মেয়েলি ইক্যুয়াল টু দুর্বলতা। মেয়ে মাত্রই দুর্বল, তাই যা কিছু মেয়েলি তাই পরিত্যাজ্য। আমরা প্রথমে আবেগপ্রবণতা আর চোখের জলকে মেয়েলি বলে দাগিয়ে দিয়েছিলাম, ক্রমে মায়া-মমতা-সহানুভুতি এগুলোও আস্তে আস্তে সেই তালিকায় ঢুকে গেছে। সেই কারনেই আমরা নেতা হিসেবে দেখতে চাই এমন একজনকে যিনি নির্মম, কঠোর, বলদর্পী হয়ত বা হিংস্রও। ... ...
আমার দুটো ঘর। একটাতে আমরা কয়েকজন মিলে থাকি, অন্যটায় পৌঁছতে হয় একা একা। যে ঘরটায় অনেকে মিলে থাকি, সেখান থেকে বার হয়ে অন্য ঘরে পৌঁছতে হলে অনেকটা পথ হাঁটতে হয়... ... ...
জানতাম না LGBT+ কাকে বলে। শুধু জানতাম একটি শব্দ ‘Gay’ আর এটাও জানতাম যে আমাকে সবসময় প্রমাণ করতে হবে যে আমি কোনো অবস্থাতেই Gay নই ... “এই বেটা, বেটিন্তর মতো হাটস কিতা, বুক ফুলাইয়া হাট” (মেয়েদের মতো হাঁটছিস কেন, বুক ফুলিয়ে হাঁট), বাবার এই কথাগুলো এখনো মাঝে মাঝে কানে বাজে। বা বোনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একটু রূপচর্চা করলে বাবা যখন বলতেন, “দুনিয়ার যত বেটিয়ামী কাম তোর” (পৃথিবীর সব মেয়েলোকের কাজ তোকে করতেই হয়) তখন মনের অজান্তেই একটা প্রশ্ন জাগত, কেন আমি এমন। কেন আমি এত হাত নাড়িয়ে কথা বলি, কেন আমার ছেলেদের শরীরের কাছঘেঁষা হয়ে থাকতে ভাল লাগে, কেন আমি ছেলেদের মত হাঁটতে পারি না। ... ...
যখন এই লেখা লিখছি তখন গাজাতে শিশুমৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। খবরের কাগজের পাতা থেকে শুকনো রক্তের গন্ধ এসে লাগছে নাকে, টিভির স্ক্রিন থেকে রক্ত চুঁইয়ে নামছে মাটিতে। আর তার মাঝে বসে আমরা গরম সিঙ্গাড়ায় কামড় দিতে দিতে বোঝার চেষ্টা করছি, দোষটা কার বেশি, ইজরায়েলের না হামাসের। আর যেই বাচ্চাটা ঝলসে গেল, এক্কেবারে মরে গেল, তার কতটা দোষ ছিল? আহা, সে তো কোল্যাটারাল ড্যামেজ। আতঙ্কবাদের বিরূদ্ধে লড়তে গেলে কয়েকশ বাচ্চা তো মারা যাবেই। কেন, ইরাকে যায় নি? আফগানিস্থানে যায় নি? যেমন মাওবাদীদের শায়েস্তা করতে গেলে বিনায়ক সেনকে জেলে পুরতেই হবে, সোনি সুরির যৌনাঙ্গে ধারালো পাথর পুরে দিতেই হবে ওদের সবক শেখানোর জন্য, উন্নয়নের জন্য উচ্ছেদ হতে হবে বনবাসীদের, শহরে আলো দেওয়ার জন্য ডুবিয়ে দিতে হবে গ্রাম কে গ্রাম, ঠিক তেমনি বিশ্বজুড়ে শান্তিকল্যাণ প্রতিষ্ঠার জন্য শেষ করে দিতে হবে পরবর্তী প্যালেস্তাইনি প্রজন্ম, হত্যা করতে হবে উত্তরকালের গর্ভস্থ পরীক্ষিতকে। ... ...
তো বস্টনের গপ্পো বলতে গেলে প্রথমেই যেটা বলতে হবে তা হল আমার অ্যাপার্টমেন্টের কথা। পয়সা বাঁচাতে (থুড়ি সেন্ট বাঁচাতে) আমি একটা পাঁচজনের সঙ্গে শেয়ার করা বাড়ি ভাড়া নিয়েছি। যেহেতু এটা আমার প্রথমবার দেশের বাইরে তাই চেয়েছিলাম একটা মিশ্র সংস্কৃতির বাড়িতে থাকতে। তো ভগবান/জেসাস আমার ইচ্ছে অপূর্ণ রাখেন নি। আমাদের বাড়িতে আমরা দুজন মেয়ে তিনজন ছেলে, তিনজন স্ট্রেট, একজন গে একজন লেসবিয়ান, দুজন কাপল, একজন ভারতীয়, চারজন আমেরিকান, একজন হিন্দু, দুজন খ্রিস্টান, দুজন ইহুদি, আর আমি যাকে আমার সম্ভাব্য বয়ফ্রেন্ড হিসেবে দেখছি সেই পাকিস্তানি মুসলিম ছেলেটিকে ধরলে একেবারে সর্বধর্মসমন্বয়। এবার এই বাক্যটা আরেকবার মন দিয়ে পড়লেই বুঝে যাবেন আমিই আমাদের বাড়ির বস্টনে বং-গে। ... ...
সুপ্রীম কোর্টের রায় নিঃসন্দেহে হতাশ করেছিল কিন্তু তার থেকেও বেশি আঘাত দিয়েছিল সেই রায়ের ভাষা। সে সম্পর্কে অন্যত্র লিখেছি তাই এখানে আর লিখছি না। তবে দুঃখ, কষ্ট হতাশার সঙ্গে যেটা যোগ হয়েছিল, সেটা একটা রাগ, একটা হতাশাজনিত ক্ষোভ। শুধু আমার মধ্যে নয়, আমার মত চারপাশের অনেক মানুষের মধ্যেই দুঃখর থেকেও বেশী ফুটে উঠেছিল রাগ, দেশের প্রতি প্রবল অভিমান। সেই সময় সেই অভিমানের অভিঘাত থেকে একটা লেখা লিখেছিলাম। প্রকাশের অযোগ্য ভাষার কারণে সেই লেখাকে সেই সময় প্রকাশ করা যায় নি। আজ এক বছরের মাথায় সেই লেখাটাকেই একটু কাঁচি চালিয়ে সভ্য করে দিলাম। মনে হল, সেই যে প্রবল রাগের অনুভূতি সেটাও ডকুমেন্টেড হয়ে থাকা দরকার। ... ...
ঠাকুমার মতন আরও শত শত স্পর্শে গায়ে কাঁটা দিল রথের, রথের রশির। তাতেই নড়েচড়ে চলতে শুরু করলেন তালধ্বজ, দেবদলন এবং নন্দীঘোষ। রথ, পথ আর মূর্তি অন্তর্যাপন করলেন আমার, তোমার এবং সকলের। ঐশ্বরিক হয়ে উঠল গায়ে লেগে থাকা সময়টুকু। জনজোয়ারের প্রবল উচ্ছাসে ঢেকে গেল জন্মমৃত্যু। তাদের গায়ে তখন সূর্যের মতন তেজ। প্রবল বৃষ্টি তাঁর কাছে এসে ইলশেগুঁড়ি হয়ে যায়। আল্পনা এঁকে যায় রশির গায়ে সাতরঙা রোদ। রামধনু হয়ে ওঠে জনজোয়ার, আনন্দতরঙ্গ তোলে আমাদের বুক ছাপিয়ে। লক্ষ লক্ষ রোদের কণা, বৃষ্টির ছাঁট আর প্রজন্মব্যাপী আনন্দস্পর্শ রামধনুর ভার বয়ে নিয়ে চলে। তাঁকে টানতে হয় না আলাদা করে। কেবল ছুঁয়ে পথ চলতে হয়। ... ...
মশলার কথা শুনেছিলাম ব্যাঙ্গালোরে থাকতে, করিমের মুখে। করিম কিছুকাল বস্টনে ছিল, তারপর এ ফর আলাস্কা থেকে জেড ফর জিম্বাবোয়েতে কাটিয়ে অবশেষে ব্যাঙ্গালরে পৌঁছয়। ছোট ছোট করে কাটা চুল, দারুন ম্যানলি চেহারা আর তার সাথে একটা সাঙ্ঘাতিক ইচ্ছাকৃত কন্ট্রাস্টে কানে গোঁজা কাঠগোলাপ ফুল, এই হচ্ছে করিম। আমি বস্টনে আসব শুনে ও আমাকে বস্টন মশালার সাথে যোগাযোগ করতে বলল। আমি বস্টন মশালাকে ইন্টারনেটে খুঁজলাম, এম ডি এইচ থেকে লাস ভেগাসের ইন্ডিয়ান স্ট্রিপ শো সব পেলাম খালি বস্টনের সাউথ এশিয়ান এলজিবিটি গ্রুপ মশালার খোঁজ পেলাম না। কারণটি অত্যন্ত সহজ, কিন্তু আমার মোটা মাথায় ঢুকতে একটু সময় লাগল। আমি জানি আপনারা আমার থেকে অনেক বেশি বুদ্ধিমান, এর মধ্যেই ধরে ফেলেছেন গোলমাল কোথায়, তাই সে কথায় পরে আসছি। ... ...
এই প্রেক্ষাপটে, সুপ্রীম কোর্টের নতুন রায় ৩৭৭ ধারার প্রযোজ্যতাকে একটা নতুন ধরণে প্রতিষ্ঠা করেছে। এই রায়ের পরে ৩৭৭ ধারা আরো বেশি করে 'সমকামিতা'-বিরোধী আইন হিসেবে প্রচারিত হচ্ছে, যাতে এটা আরো বেশি বিপজ্জনক ভাবে প্রযুক্ত হতে পারে। এই আইন নাকি বিশেষভাবে 'সমকামিতা' কে অবৈধ করে, এইরূপ অপপ্রচারের ফলে পুলিশ এবং সমাজের রক্ষণশীল অংশ আরো বেশি করে জানতে পারছে যে ৩৭৭ ধারাকে প্রান্তিক লিঙ্গ ও যৌনতার মানুষদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে । কিন্তু এই ধারা নিয়ে চর্চা করে এবং গণমাধ্যমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এই আইনের গুরুত্বকে যতটা বাড়িয়ে তোলা হয়েছে, এই বিচার ও ৩৭৭ ধারার সঠিক অর্থ নিয়ে ততটা আলোচনা হয়নি। সুপ্রীম কোর্টের এই নতুন রায়ের দরুণ যে যে সাম্প্রতিক বিক্ষোভ দেখা গেছে তা আসলে ২০০৯ সালের সেই সিদ্ধান্তের প্রতীকি গুরুত্বের ফল । সংখ্যালঘু যৌনতার অধিকারের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক রায়ের তাৎপর্য ও গুরুত্বকে খাটো করার জন্য এই কথা বলা হচ্ছে না। কিন্তু হয়ত আন্দোলনকর্মীদের, বিচারব্যবস্থার এবং গণমাধ্যমের উপলব্ধি করার সময় এসেছে যে লিঙ্গান্তরকামী বা যৌনসংখ্যালঘু মানুষের জীবনে অসহায়তা এবং তাঁদের অধিকারলঙ্ঘন শুধুমাত্র ৩৭৭ ধারার নিরিখে বিচার করা যাবে না, বরং তা এই আইন এবং বিচারের চেয়ে অনেক সুদূরপ্রসারী আকার নেয়। শুধুমাত্র ৩৭৭ ধারার প্রতি অতিরিক্ত নজর না দিয়ে যৌনতা ও লিঙ্গ -ভিত্তিক বৈষম্যের সেই বিস্তৃত ক্ষেত্র সমকালীন ও ভবিষ্যৎ ভারতীয় রাজনীতির কেন্দ্রস্থলে নিয়ে আসতে হবে। ... ...
স্বভূমে পরবাসী আমি সেদিন কাজে যাবার পথে স্মার্টফোনের পাতায় খবর দেখতে গিয়ে সেই ঝাপটা খাই। ৩৭৭ ফিরে আসার খবর। মোবাইলে মেসেজ ভেসে আসে। আর ওলট পালট হতে থাকে আমার ভিতর। বাসভূমি থেকেও কি চিরকাল তবে স্বদেশহারা থেকে যাব আমরা? কখনো এ দেশে, শৈশবের মাঠে, কৈশোরের শুঁড়িপথে হাত ধরে হাঁটা হবে না আমাদের, ঠোঁটে ঠোঁট রাখা হবে না বৃষ্টির বোলপুরে, অকারণে অপরাধী হয়ে থাকতে হবে? সন্তান, স্বাগতম, শুভেচ্ছা কিছুই পাব না? আমরা একটিভিস্ট নই, রাজনীতিক নই, নিতান্ত সাধারণ মানুষ। মুখচোরা, পড়ুয়া, হাসিখুশি, চোখে চশমা, ঠিক আর পাঁচজনের মত মানুষ। আমরা ভয় পাই। ক্লান্ত, অন্তহীন লড়াইএর ভয়, অহেতুক আক্রমণের ভয়, ঘৃণার ভয়, কৌতুহলের ভয়, জীবিকা হারানোর ভয়। আর অপমানিত হই। যখন সর্বশক্তিমান ধর্মগুরু বলেন আমাদের সারিয়ে দেবেন যে কোনো দিন। যখন কাগজের পাতা থেকে টিভির পর্দায় আমাদের যৌনজীবনের ঠিক কতটা "এগেইনস্ট দ্য নেচার" এই নিয়ে ডিবেট চলে। যখন ধরেই নেওয়া হয়, আমাদের প্রেম প্রেম নয়, দুটি যৌনাঙ্গের বিকৃত সহাবস্থান মাত্র। একে অন্যকে আঁকড়ে এই ভয় বুকে নিয়ে আমরা ঘুমোই, আর সারাদিন আমার চোখ জ্বালা করে। সারাদিন। ... ...
যারা ভাবছেন, বিয়ের অধিকার না পাওয়া গেল তো কী এসে গেল, ইকুয়াল ডোমেস্টিক পার্টনারশিপ তো দেওয়াই হচ্ছে, তাদের জন্য একটা ছোট্ট সওয়াল। ধরুন কোন স্কুলে বলা হল, সবাইকে সমান ভাবে পড়ান হবে, একভাবে পরীক্ষা নেওয়া হবে, খাতা দেখা হবে, শুধু খাওয়ার জলের কলটা ইসলাম ধর্মাবলম্বী ছাত্রছাত্রীদের জন্য আলাদা হবে, মেনে নেবেন? জল একই থাকবে, শুধু কলটাকে সবুজ রঙ করে দেওয়া হবে? জানি আপনি মেনে নেবেন না, কেননা আপনি যদি মেনে নেওয়ার দলের হতেন তা হলে এই লেখাটা এতদূর পড়তেন না। দিনের শেষে সাম্যের অধিকার এক মৌলিক অধিকার, যে অধিকারের প্রশ্নে আপোষ করা চলে না। ... ...
সত্যি কথা বলতে কি, এটাই আমার বস্টনে প্রকৃত কামিং আউট। কেন না আগের দুটো ঘটনাকে কামিং আউট না বলে ক্যাচ আউট আর বোল্ড আউট বললে বোধ হয়, ঠিক বলা হয়। কিন্তু ল্যাবের কামিং আউটটা একেবারে স্টেজে দাঁড়িয়ে, মাইক হাতে নিয়ে ঘোষণা। আর তার সঙ্গে একটা মজার ঘটনা জড়িত, সেটা বুদ্ধদেবকে নিয়ে। বুদ্ধদেব আমার ল্যাবের বাঙালি সহকর্মী। আমার থেকে একটু বড়, বিবাহিত, একটি বেশ মিষ্টি দু বছরের ছোট্ট ছেলে রয়েছে। বুদ্ধদেব দেখলাম দারুণ মিশুকে, প্রথম দিনেই আমাকে বাড়ি নিয়ে চলে গেল, তারপর যা হয়, গপ্পো, আড্ডা, কফি। প্রথম দু-একদিন খারাপ লাগে নি, কিন্তু তারপর বুঝলাম, ওর জীবনের ফিলসফি হল, এই দুনিয়ার সব কিছুই খারাপ। কালোরা খারাপ, মুসলিমরা খারাপ, মিডল ইস্ট খারাপ, মেক্সিকানরা খারাপ, ডেমোক্র্যাট খারাপ, ইন্ডিয়া খারাপ তো বটেই, কলকাতা আরো খারাপ। কিছুদিনের মধ্যেই বুঝলাম, এর সাথে বেশিক্ষণ সময় কাটালে নির্ঘাত ডিপ্রেসড হয়ে যাব। অতএব, বুদ্ধং শরণং থেকে আমাকে পালাতে হবে। কিছুদিন অল্পবিস্তর এড়িয়ে চলার চেষ্টা করলাম, তাতে দেখলাম ও ভারি দুঃখ পেয়ে গেল। কী করি, কী করি ভাবছি, টুরিং পথ দেখালেন। ... ...
এ লেখা তোমার কাছে যাবে, তুমি পড়বে, এ ভ্রমে আমি নেই। তবু যদি এই উড়োচিঠি হাজির হয় তোমার কাছে কোনোদিন, কোনোভাবে – নিজে থেকে শুধু মেসেজ কোরো ‘পড়েছি’। আমি তার পরিপ্রেক্ষিতে তোমায় কোনো কথা জিজ্ঞাসা করে বিব্রত করব না। অর্ক, ভালবাসা তো প্রকাশ পেতে চায়। পৌঁছাতে চায় গন্তব্যে। অনেকের ভালবাসা সে পথে হাঁটা শুরুই করে না। আমাদের করেছিল। আমি বিশ্বাস করি করেছিল। কিন্তু মাঝপথে যেই হারিয়ে ফেলার কষ্ট তো যাওয়ার নয়। তবু তুমি ‘পড়েছি!’ জানালে, জানব, একসাথে না হোক, আমরা কোনো একভাবে গন্তব্যে পৌঁছলাম। ... ...
আরে মানবিকতা কি ইজের নাকি য্খন খুশী যত খুশী যেদিকে চাই স্ট্রেচ করা যায়? এরকম করতে করতে একদিন পশু-মানব মৈত্রীর খাতিরে কচি পাঁঠাও ত্যাগ করতে হবে। তোদের মত যারা সরল হাসির জিনিস কে নিয়ে জলঘোলা করতে পারে, তাদের মনেই খুঁত। বিলক্ষণ জানি। আর জানি -- ক্লীবে প্রেম করে যে জন, সে জন মারিছে হিউমার । আবার বলি, আমরা কিন্তু শুধুই হাসতে চেয়েছিলাম। আমার হার্ট ঠিক জায়গাতেই আছে, তাতে কেউ হার্ট হলে আমার দোষ না। দুনিয়া টা জানবি কন্সার্ভেশান ওফ খিল্লি প্রিন্সিপলে চলছে। খিল্লি লস্ট = খিল্লি গেইনড। ... ...
কামনায় মেয়ে মানে ঠিক কী তা আমি জানি না - মেয়ের কামনা যেমন হবে নাকি যেমন কামনা হলে মেয়ে বলা হবে? যদি প্রথমটা হয় তাহলে শরীরে মেয়ে আমি যে কামনা করব সেটাকেই মেয়ের কামনা বলে ধরে নিতে হবে। কাজেই আমার মেয়েকে কামনা করাও তাহলে মেয়ের কামনা, যা আমাকে কামনায় মেয়ে করে তুলতে পারে। কিন্তু যদি দ্বিতীয়টা হয় তাহলে ছেলেদের কামনা না করলে আমি কামনায় মেয়ে হব না। আবার দ্বিতীয়টাকে বেঞ্চ মার্ক হিসাবে ধরলে যেসব শারীরে পুরুষ পুরুষদের কামনা করে তাদেরও মেয়ে বলতে হয়। আমার আপত্তি নেই এ ব্যবস্থায়, কিন্তু বাকি সবাই রাজি কী? ফোর্থ ডাইমেনশনের হিসাবটাও এখানে এক্কেবারে ফিট করে যাচ্ছে, যে নিজেকে মেয়ে বলে উপলব্ধি করেছে সেই মেয়ে। যে পুরুষ (শরীরে) নিজেকে মেয়ে বলে উপলব্ধি করে পুরুষকে কামনা করেছে সেও মেয়ে, আবার যে পুরুষ (শরীরে) নিজেকে মেয়ে বলে উপলব্ধি করে মেয়েকে কামনা করেছে সেও মেয়েই। এর উল্টোটাও সত্যি, তবে সেটা ছেলে হবার গল্প, সেটা এখন বলছি না। ... ...